* রোযার গুরুত্ব 
রোজার মূল উদ্দেশ্য সাধনই ব্যর্থ। এ জন্য রাসূল সা: বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে না পারে তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই’ (বুখারি)
আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির পাশাপাশি দৈহিক উন্নতিতেও রোজার ভূমিকা লক্ষণীয়। দীর্ঘ সময় পানাহার বর্জনে পরিপাকতন্ত্র সতেজ হয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত। পারস্পরিক সহানুভূতি-সহমর্মিতা ও সামাজিক সম্প্রীতি-ভাতৃত্ববোধসহ মানবিক গুণাবলি প্রতিষ্ঠিত করতে রোজার ভূমিকা অনন্য। ভোগবিলাসে অভ্যস্ত মানুষেরা রোজার মাধ্যমে ক্ষুধা-তৃষ্ণার ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারে। এতে দরিদ্র-নিরন্ন মানুষের প্রতি বিত্তশালীদের সহানুভূতি-সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত হয় এবং সমাজে সাম্য-মৈত্রীর পরিবেশ গঠন করতে সহায়তা করে। রোজা মুসলিম সমাজে পবিত্র-পুণ্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। রোজার মাধ্যমে মানুষ ধাবিত হয় পুণ্যের দিকে এবং দূরে থাকার সুযোগ পায় অন্যায়-পাপাচার থেকে। কঠোর সংযম সাধনা-সৎচিন্তায় রোজাদারের মন পাপ-পঙ্কিলমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়ে ওঠে। তাই রোজার মাসে সমাজের সর্বত্র সৌম্য-শান্ত পূত পবিত্রতা বিরাজ করে। আর গোটা সমাজ মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতের ফল্গুধারায় অভিষিক্ত হয়ে ওঠে। হাদিসের ভাষায়, ‘রমজান মাসে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। অপর দিকে দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়’ (বুখারি ও মুসলিম)।
রোজা মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য-সমৃদ্ধির স্মারক। রোজার মাসেই বিশ্ববাসীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআন। রোজার রাতেই লুকিয়ে আছে হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ রাত ‘লাইলাতুল কদর’।
আর রোজার মাসেই বদর যুদ্ধে অল্প সংখ্যক মুসলিম সৈনিক বিজয়ী হয়েছিলেন প্রশিক্ষিত বিশাল কাফির কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ রকম অনেক সুখকর ঘটনা ঘটেছে মহিমান্বিত রমজান মাসে। প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক-নৈতিক উন্নতি, পারস্পরিক সহানূভূতি-সহমর্মিতা, সামাজিক উন্নয়ন-সম্প্রীতি অর্জনের লক্ষ্যে রোজার কঠোর সংযম সাধনা এক অনন্য ইবাদত। তাই মুসলিম সমাজে রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক ও অসাধারণ। আসুন আমরা সবাই যথাযথভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি, দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ অন্বেষণ করি।